স্ক্রিন প্রিন্টিং এ স্ক্রিন/মেষের সাইজ নির্বাচন করার পদ্ধতি

স্ক্রিন প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মাপের মেষ কাপড় বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ব্যাবহার করা হয়।

 

মেষ -এর মাপ/সাইজ কি?

মেষ সাইজ হচ্ছে ১ বর্গ ইঞ্চিতে কতগুলো সুতা একে অপরকে অতিক্রম করে। উদাহরণ স্বরূপঃ ১১০ মেষ কাপড়ের প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১১০ টি সুতা থাকবে, অথবা এও বলা যায়-একে অপরকে অতিক্রম করবে। মেষ কাউন্ট যত বেশি হবে, মেষ কাপড়ের ছিদ্র গুলো ততো সূক্ষ্ম হবে। মেষ কাপড় নির্বাচনের সময় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আপনার প্রিন্টিং-এর ইমেজ/ছবি কতটা সূক্ষ্ম। 

উদাহরণ স্বরূপঃ আপনার প্রিন্টিং-এর ইমেজ/ছবি খুবি সূক্ষ্ম, সে ক্ষেত্রে কম/লো মেষ কাপড় ওই সূক্ষ্মতা ধরে রাখতে পারবে না। সরু রেখা অথবা এর জায়গা গুলোতে কালি মেষ কাপড়ের ছিদ্র দিয়ে বেশি পড়ে যাবে, এতে করে আপনার প্রিন্ট করা ইমেজ/ছবি হবে খুবি ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের। এবং যদি আপনার প্রিন্টিং-এর ইমেজ/ছবি সূক্ষ্ম না হয়ে থাকে, আর আপনি উচ্চ/হাই মেষ কাপড় ব্যাবহার করেন সে ক্ষেত্রে আপনার কাপড়ে পর্যাপ্ত পরিমান কালি পড়বেনা।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, সেটি হচ্ছে কালির ঘনত্ব। পাতলা কালি, যেমনঃ পানি নির্ভর/ ওয়াটার বেইসড কালিতে সাধারণত উচ্চ/হাই মেষ কাপড় দরকার হয়। যদি এই ক্ষেত্রে কম/লো মেষ কাপড় ব্যাবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে পাতলা কালি মেষ-এর ছিদ্র দিয়ে দরকারের চেয়ে বেশি হারে পড়ে যাবে গারমেন্ট এর উপর। এতে করে গারমেন্ট উপর প্রিন্ট করা ছবি/ইমেজ ঝাপসা হয়ে যাবে। অন্য দিকে, আপনি যদি ঘন কালি যেমনঃ প্লাস্টিসোল ইঙ্ক অথবা হোয়াইট ইঙ্ক দিয়ে প্রিন্ট করতে চান সে ক্ষেত্রে কম/লো মেষ কাপড় ব্যাবহার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে উচ্চ/হাই মেষ কাপড় ব্যাবহার করলে কালি মেষ এর ভেতর দিয়ে যেতে পারবে না, এতে করে প্রিন্ট হবে অস্পষ্ট।

আপনি খেয়াল করবেন, একেক কোম্পানিতে ভিন্ন ভিন্ন মাপ/সাইজের মেষ কাপড় পাওয়া যায়। যদি মেষ কাউন্ট খুব কাছাকাছি হয়, যেমনঃ ১৫৫ বা ১৫৬, ১৯৬ বা ২০০ অথবা ৮১ বা ৮৬ এই পার্থক্য গুলো খুবি নগণ্য। যা প্রিন্টের ক্ষেত্রে তেমন কোন পার্থক্য সৃষ্টি করে না।  যেহেতু সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টিং অনেক প্রকারের রয়েছে, তাই আমরা আপনাদের একদম সঠিক ভাবে কোন কাজের জন্য কোন সাইজের মেষ লাগবে বলতে পারছিনা। তবে, কোনো নির্দিষ্ট ধরনের প্রিন্টের জন্য কোন সাইজ মাপের মেষ প্রয়োজন তার সম্পর্কে সাধারন একটি ধারনা দিতে পারি আমরা।


১১০ মেষ কাউন্ট

১১০ এবং ১৫৬ সাইজের মেষ হচ্ছে সবচেয়ে মান সম্পপন্ন মেষ। ১১০ মেষ দিয়ে পুরু/মোটা কালির প্রিন্ট করা হয়। এই মেষ মোটা লিখা অথবা বড় স্পট কালার ডিজাইনের জন্য ব্যাবহার করা হয়। এই মেষটি হোয়াইট ফ্ল্যাশ প্লেট অথবা আন্ডারবেস দেয়ার জন্য ও ব্যাবহার করা হয়। কারন বেশিরভাগ সময় আমাদের একবারই প্রিন্ট করা লাগে, যা উৎপাদন/ প্রোডাকশন অনেক গুনে বাড়িয়ে দেয়। ১৫৬ মেষ দিয়ে সীমিত পরিমান কালি প্রবাহিত হয়, কিন্তু এটি ডিটেইল/সূক্ষ্ম ইমেজ প্রদান করে।

১১০ মেষ কাউন্ট
১১০ মেষ কাউন্ট

১৫৬ মেষ কাউন্ট
১৫৬ মেষ কাউন্ট


কম মেষ কাউন্ট

৩৮ মেষ কাউন্ট

৩৮ এর মেষ কাউন্ট ১১০ এর চেয়ে কম এবং এগুলি প্রায়শই বিশেষ ধরণের প্রিন্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনি যে সকল যায়গায় এই মেষের ব্যবহার দেখতে পাবেন তা হল গ্লিটার প্রিন্ট এবং শাইমার/মেটালিক কালারের জন্য। এই প্রিন্ট গুলোতে গ্লিটার ফ্লেক্স/পাউডার ব্যবহার করা হয় প্রিন্টিংএ চক চকে রুপ দেওয়ার জন্য। যদি আপনার মেষ গণনা খুব বেশি হয় তবে এই ফ্লেক্স/পাউডার গুলি আপনার স্ক্রিনের আটকে যেতে পারে, ফলশ্রুতিতে আপনার ফেব্রিকে কালি ঠিক ভাবে পড়বে না। গ্লিটার এর দানা/পাউডার গুলো অনেক বড় হয়, আর শাইমার/মেটালিক কালিগুলিতে এর দানা গুলো খুব ছোট হয়। গ্লিটারের জন্য ৩৬ টি মেষ আদর্শ, যদিও আপনি ৬৪ মেষ কাউন্ট পর্যন্ত ব্যাবহার করতে পারেন। শাইমার/মেটালিক কালির জন্য ৮৬ মেষ কাউন্ট ব্যাবহার করা বাঞ্ছনীয়।

৩৮ মেষ কাউন্ট
৩৮ মেষ কাউন্ট

২৩০ মেষ কাউন্ট

হাই মেষ কাউন্ট যেমন 200 বা তার বেশি মেষ কাউন্ট ব্যবহার করা হয় সূক্ষ্ম প্রিন্ট এবং পাতলা কালি এর ক্ষেত্রে। গ্রাফিক্স, ডিসচার্জ এবং ওয়াটার বেইসড কালির জন্য এই মেষ/স্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। হাই মেষ দিয়ে পাতলা কালি সহজেই প্রবাহিত/পাস হয়। আপনি যদি আপনার প্লাস্টিসল প্রিন্টগুলিতে ভাল এবং সফট হ্যান্ড ফিল চান তাহলেও এই মেষ/স্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। আপনার প্লাস্টিসল প্রিন্টগুলি সফট হ্যান্ড ফিল হলেও আপনি হাই মেষ কাউন্ট ব্যবহার করে প্রিন্ট স্বচ্ছতাকে কমিয়ে আনতে পারেন। যদি আপনার ডিজাইনটি খুব উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত/ভাইব্রেন্ট রঙ হয় তবে আপনার স্ক্রিনটি দিয়ে কতটা কালি পাস হচ্ছে তা যাচাই করে নিন।

২৩০ মেষ কাউন্ট
২৩০ মেষ কাউন্ট

সাদা এবং হলুদ মেষ

আপনারা হয় খেয়াল করেছেন মেষ সাধারণত দুই কালারে হয়। সাদা এবং হলুদ। এর কারণ কি?

সাদা মেষে ইমালশান খুব দ্রুত এক্সপোজ/প্রকাশ করে। এছাড়াও সাদা মেষ দিয়ে আলো খুব সহজেই পাস হয়, যার ফলশ্রুতিতে ডিজাইন/ইমেজের সূক্ষ্মতা এবং এর এডজ/প্রান্ত ঘোলাটে বা সঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও কম মেষ কাউন্ট এর ক্ষেত্রে মোটা ইমালশানের কোট প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে সাদা মেষ দিয়ে এক্সপোজিং এ সময় কম লাগে।

হলুদ মেষ দিয়ে আলো সামান্য কিছুটা কম পাস হয়, এতে করে ইমেজের ডিটেইলস/সূক্ষ্মতা বজায় থাকে। যদিও হলুদ মেষ দিয়ে এক্সপোজ করতে ৩০% বেশি সময় নেয়।


বিদ্রঃ উপরের ব্লগটি www.screenprinting.com থেকে নেয়া

Comments

Post a Comment

Popular Posts